Bandarban


ঢাকা থেকে বান্দরবান যায় এমন প্রায় ১০/১২ টা পরিবহন আছে। সব থেকে ভালো সার্ভিস পাবেন শ্যামলী পরিবহন এবং হানিফ পরিবহন এ। এছাড়াও সেন্টমারটিন সারভিস,ডলফিন,শান্তি,ইউনিক,এস আলম সহ আরো কিছু বাস সার্ভিস আছে। এসি সার্ভিসের মধ্যে শ্যমলী আর সেন্টমারটিন পরিবহন বাকী সব নন এসি বাস। নন এসি বাস ভাড়া জন প্রতি ৬৫০/- আর এসি বাস ভাড়া ৮৫০/- তবে ঈদের সময় ভাড়া তারতম্য হতে পারে।রাত ১০:৩০ থেকে ১২ টা পর্যন্ত বাস ছাড়ে। ধরেন আপনি শ্যামলী নন এসি বাসে করে রাত ১১ টায় রওয়ানা দিলেন। বাস ছাড়ে ফকিরাপুল,আরামবাগ,সায়েদাবাদ,চিটাগাংরোড থেকে।

 খুব ভোরে বান্দরবান এসে পৌছাবেন। আসতে পথে শহরের ১০ কিমি আগে থাকতেই পেয়ে যাবেন পাহাড়ি একা বাকা পথ। যদি না ঘুমিয়ে যান আমি শিউর তখন থেকেই আপনি রোমাঞ্চিত হতে থাকবেন। এবং পথের মাঝে ফেলে আসবেন মেঘলা পর্যটন স্পট ও নিলাচল। যাইহোক ভোরে শহরে নেমে বাস স্টপিজে একটা মসজিদ পাবেন। এর পাশেই পাবলিক টয়লেট আছে। এখানে চাইলে ফ্রেশ হতে পারেন। তারপর সকালের নাস্তা সেরে নিবেন আশেপাশের কোন রেস্টুরেন্ট এ। প্রথমে একটা অটো নিয়ে চলে যান স্বর্ণ মন্দির ভাড়া নিবে ১৫০ টাকা। সকালের স্বর্ণ মন্দির দেখতে অনেক সুন্দর।ঘন্টা খানেক কাটান এই মন্দিরে। তারপর একটা অটো নিয়ে চলে যাবেন শৈল প্রপাত ভাড়া ৪০০ টাকার মত নিতে পারে। সেখানে ধরেন ৮/৮:৩০ টা পর্যন্ত থেকে চলে আসবেন রুমা বাসস্ট্যান্ড। রুমা বাসস্ট্যান্ড ভাড়া নিতে পারে ১৫০-২০০ টাকার মত। এখান থেকে রুমা বাজার পর্যন্ত বাস যায় লোকাল ভাড়া জনপ্রতি ২০০-২২০ টাকা। অথবা চাইলে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ নিতে পারেন ভাড়া ৪০০০-৪৫০০ টাকা নিবে। সকাল ৮ টার বাসে ধরেন আপনি রুমাবাজারে রওয়ানা দিলেন ঘন্টা দুইয়ের মধ্যে পৌঁছে যাবেন। বেলা তখন হয়ত ১১/১২ টা বাজবে। রুমা বাজারে গিয়ে আপনাকে গাইড নিতে হবে বাকী পথ যাবার জন্য। গাইড খরচ দিন প্রতি ৫০০ টাকা,তবে যদি পাও গেলে আলাদা ১০০০ টাকা নিবে গাইড। এখানে আপনার নাম ঠিকানা মোবাইল নাম্বার সম্বলিত একটা ফর্ম বিডিআর ক্যাম্পে জমা করে যেতে হবে আপনার নিরাপত্তার জন্যই। তারপর এখান থেকে আবার চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে বগালেক। চাইলে রিজার্ভ নিতে পারেন অথবা লোকালে যেতে পারেন। রিজার্ভ ভাড়া ২২০০-২৫০০ টাকা, লোকাল ২০০ টাকা জনপ্রতি।
এই পথটা খুবই ভয়ানক সুন্দর মাটির ইটের কাচা পাকা রাস্তা। আর সেই লেভেলের আপহিল ডাউনহিল। যারা প্রথম যাবেন তারা বুকে সাহস রাখবেন কিছু হবেনা। ভয় যেখানে নাই সেখানে এডভেঞ্চার ও নাই মনে রাখবেন। প্রায় ২-২.৫ ঘন্টার এই পথ আপনাকে অনেক বেশি আনন্দ আর ভয় দিবে। ধরেন ৪-৫ টার মধ্যে এলেন বগালেকের নিচে কমলাপয়াড়া।এখানে নেমে আগে একটু বসে জিরিয়ে নিন। আগেই উপড়ে তাকাইয়েন না।কারন এখন আপনার দুই চোখের সামনে বিশাল উচুতে যে পাহাড়ের চুড়া দেখছেন আপনাকে হেটে হেটে ওই পাহাড়েই উঠতে হবে। ওই চুড়ার উপড়েই বগালেক। ভয় পাবেন না। আল্লাহর নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করুন তবে খুব খেয়ালে এবং অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন। কারন এই পাহাড়ে উঠার পথটা খুবই সরু আর খাড়া,তাছাড়া ডান দিকে বিশাল খাদ। একবার পা পিছলে গেলে অক্কা নিশ্চিত। দল বেধে সবাই একসাথে উঠুন।যেনো একজনের বিপদে আরেকজন হেল্প করতে পারেন। ধরেন ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে উঠলেন তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে যাবে। ধরেন আপনি খুব পিপাসিত আপনার অন্তর আত্মা বেড়িয়ে যাচ্ছে পানির জন্য তখন যদি কেউ আপনাকে এক ফোটা জল পান করায় কেমন খুশি হবেন তখন??? আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, সারাদিনের সব জার্নির ধকল আর এতো বড় এক পাহাড় বেয়ে যখন উপড়ে উঠে বগা লেকটা আপনার নজরে আসবে , আর আশেপাশের প্রকৃতি দেখবেন, আপনি নিমেষেই সেই জল পানের চেয়ে বেশি তৃপ্তি পাবেন , ভুলে যাবেন পিছনের সব ক্লান্তি।
এবার একটু নিচের দিকে নেমে চলে যান বগালেক এর পাশে অনেক রিসোর্ট আছে। একটা কথা মনে রাখবেন এই রিসোর্ট গুলা আপনার শহরের মত ৫ স্টার মানের ও না এসি সিস্টেম ও না। এই রিসোর্ট গুলা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে। আপনার গাইড ই আপনার জন্য রুম ঠিক করে দিবে। জনপ্রতি ভাড়া ১৫০ টাকা পড়বে। একসাথে অনেকেই এক রুমে ঢালা বিছানায় থাকবেন সেভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিন। চাইলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ ফুট উঁচু এই বগালেকে সন্ধ্যায় একটু ঝাপাঝাপি করে নিতে পারেন কোমল হওয়ার জন্য। খুবই ঠান্ডা কোমল শীতল পানি। রাতে এখানেই দেখবেন অনেকে বসে আড্ডা দিচ্ছে আশপাশ ঘুরছে আপনিও একটু আড্ডা ঘুরাঘুরি করে নিতে পারেন। রাতের খাবার এখানেই পাবেন। তবে মুসলিমদের জন্য পরামর্শ বান্দরবান শহর ছাড়া অন্য কোথাও গরু/খাসির মাংস বলে কেউ কিছু দিলে খাবেন না। প্রয়োজনে সবজি ডাল ভাত খান অথবা মুরগি। খাবারের খরচ ও বেশি না ৫০-১৫০ টাকা দিয়ে ভরপুর খেতে পারবেন। খাওয়া দাওয়া করে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যান।কারন খুব ভরে উঠে আপনাকে রওয়ানা দিতে হবে বাংলাদেশের পঞ্চম হাইস্ট পিক কিওক্রাডং।গাইড কে বলে রাখুন সেই আপনাকে সময়মত উঠিয়ে দিবে।
রাতের ঘুম খুব ভালো হবে আপনার জানি কারন এমন পরিবেশে ঘুমিয়ে আপনিও খুব রোমাঞ্চিত। খুব ভোরে উঠে পড়ুন, নিজের ব্যাগ রুমে রেখে শুধু পড়নের কাপড় মোবাইল,পাওয়ার ব্যাংক,টাকা নিয়ে সবাই একটা ব্যাগ এ ভরে নিন।এতে করে সবাই মিলে ওই ব্যাগ বহন করবেন কারোই তেমন কষ্ট হবেনা। সাথে কিছু শুকনা খাবার আর পানি নিয়ে নিন প্রত্যেকে বোতলে ভরে। ধরেন সকাল ৬ টায় যাত্রা শুরু করলেন পাহাড়ি পথ ধরে।পথে পাবেন প্রথমে ব্লু বার্ড ঝর্ণা তারপর একটা বিশাল ঝর্ণা চিংড়ি ঝর্ণা।আপহিল গুলা উঠতে জানি একটু কষ্ট কিন্তু সত্য বলতে এই কস্টে কোন কষ্ট নাই। আছে শুধু মজা আর নতুন কিছু খোজার নেশা। ৩ ঘন্টার মত হেটে চলে আসবেন আপনার স্বপ্নের চুড়া কিওক্রাডং। তখনকার অনুভুতি আর এই চুড়ায় দাঁড়িয়ে দুনিয়াটা দেখায় কেমন টা না হয় আমি নাই বললাম । সেটা শুনবো আপনার মুখেই ঘুরে আসার পর। এখান থেকে চাইলে সেম ওয়েতে ব্যাক করে বগালেক যেতে পারেন অথবা দুই ঘন্টা যাওয়া দুই ঘণ্টা আসার পথ পাড়ি দিলে ঘুরে আসতে পারবেন এক অনন্য ঝর্না জাদিপাই। আমার মতে এটা মিস করা বোকামী হবে যদিও একটু কষ্টকর কিন্তু মজা টা অনেক বেশি। বিকালের মধ্যে আবার ফিরে আসবেন বগা লেক।আর হা যাওয়ার সময় অবশ্যই পানির বোতল আর শুকনা খাবার বিস্কুট , কলা সাথে নিয়ে যাবেন। আপনি আস্তে ধীরে হেটে গেলেও জাদিপাই পর্যন্ত ঘুরে রিলাক্সে সন্ধ্যার মধ্যে বগালেক ফিরে আসতে পারবেন। শুক্রবার রাত বগালেকেই কাটান আবার।

No comments

Powered by Blogger.